মহীশূরের পতনের কারণ, মহীশূরের প্রধান পতনের কারণ, মহীশূরের যুদ্ধ কি, মহীশূরের পতনের কারণগুলি কি কি, মহীশূরের যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়।
মহীশূরের পতনের কারণ
ঐতিহাসিক উইক মন্তব্য করেছেন যে, মহীশুর সাম্রাজ্য।
প্রতিষ্ঠার জন্য হায়দার এবং তা ধ্বংস করার জন্য টিপু জন্মগ্রহণ করেন (Haider was born to create an empire, Tipu to lose one.)। এ ধরনের মন্তব্যে কিছুটা সত্যতা থাকলেও তা সম্পূর্ণভাবে মেনে নেওয়া যায় না। টিপু সুলতান বা মহীশুর রাজ্যের পতনের পশ্চাতে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল।
প্রথমত, দেশপ্রেমিক ও বীর যােদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও পিতা হায়দার আলির বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি, কূটকৌশল ও বিচক্ষণতা পুত্র টিপু সুলতানের ছিল না। ইংরেজদের প্রতিরােধ করার জন্য দাক্ষিণাত্যের অন্যান্য শক্তিগুলি থেকে ইংরেজদের বিচ্ছিন্ন করা অপরিহার্য ছিল। টিপু সুলতান এ ধরনের কূটনীতি প্রয়ােগের কথা চিন্তা করেননি।
Read More : Rich Dad Poor Dad By Robert Kiyosaki – eBook
দ্বিতীয়ত, টিপু সুলতান যুদ্ধ ও শাসনব্যবস্থার সব দিকে নিজেই নজর দিতেন। খুঁটিনাটি সব বিষয়ে নজর দিতে গিয়ে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি উপযুক্তভাবে নজর দিতে পারেননি। এর ফল রাষ্ট্রের পক্ষে মঙ্গলজনক হয়নি।
তৃতীয়ত, ইংরেজরা টিপুর বিরুদ্ধে মারাঠা ও নিজামের সাহায্য পেয়েছিল। টিপু কিন্তু কোন দেশীয় শক্তির সাহায্য পাননি। তিনি নির্ভর করেছিলেন ফরাসী সাহায্যের ওপর, যা বস্তুত কোন উপকারেই আসেনি।
চতুর্থত, টিপু রাজধানী শ্রীরঙ্গপত্তমের নিরাপত্তার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরােপ করেছিলেন। তার রাজত্বের শেষ দিকে তিনি রাজধানী অবরােধ হওয়া সম্পর্কে অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। এজন্য প্রয়ােজনীয় সব। মালপত্র তিনি রাজধানীতে গুদামজাত করেন। রাজধানীর নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে তিনি রাজ্যের সামগ্রিক নিরাপত্তার প্রতি অবহেলা করেন।
Read More : নেতাজী ও আজাদ হিন্দ-বাহিনী – Netaji and Azad Hind-forces
পঞ্চমত, ইংরেজদের বিরুদ্ধে হায়দার আলির সাফল্যের মূলে ছিল তার অশ্বারােহী বাহিনী। টিপু সুলতান অশ্বারােহী বাহিনীর সংখ্যা হ্রাস করে। পদাতিক বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। এর ফল ভাল হয়নি। টিপুর আমলে ইংরেজরা একটি সুদক্ষ অশ্বারােহী বাহিনী গড়ে তুলে তার অশ্বারােহী বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে এবং অপরপক্ষে, টিপুর পদাতিক বাহিনীও বন্দুক ও কামানে সজ্জিত ইংরেজ পদাতিক বাহিনীর সঙ্গে পেরে ওঠেনি।
ষষ্ঠত, সামগ্রিকভাবে ব্রিটিশ বাহিনীর রণকৌশল ও সামরিক দক্ষতা মহীশূরের বাহিনী অপেক্ষা অনেক উন্নত ছিল।
সপ্তমত, ভারতের বৃহত্তর অংশ জয় করে ইংরেজ সেনাদল তখন একরকম অপরাজেয় হয়ে ওঠে। এ রকম একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেশি দিন কারাে পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। টিপুর ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক কিছু হয়নি। সর্বশেষে বলা যায় যে, টিপুর কর্মচারীদের একটি অংশ তার বিরুদ্ধে ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এইসব কারণে মহীশুর রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল।