Bengali StoriesStories

Alta Sindur – Bhayonkar Sob Bhooter Galpo

Bhayonkar Sob Bhooter Galpo – Alta Sindur, ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প আলতা সিঁদুর, এই গল্পটি নেওয়া হয়েছে (ভয়ঙ্কর সব ভূতের গল্প) এই বইটি থেকে।

গল্পের প্রথম ভাগ

পুজো সামনে, কেনাকাটির খুব ভীড়, রাস্তায় পা দেওয়ার জায়গা নেই। খালি মানুষের মাথা আর মাথা। এই এত ভীড়ের মধ্যেও কেমন যেন ভাললাগা মিশে থাকে। পুজো। আসছে, ঢাকের আওয়াজ, কাশফুলের হাসি, আকাশে-বাতাসে আগমনীর গান। মানুষগুলাের হাসি হাসি মুখগুলােই বুঝিয়ে দেয় আনন্দোৎসব আসছে। সবাইকে দিতে থুতে হবে।

এবার মা দুর্গা আসছেন দোলায় চড়ে। সবার মুখে এককথা তুফান হবে। নৌকায় এলে নাকি বৃষ্টি হয়। সবচেয়ে ভাল ঘােড়ায় চড়ে আসা। প্রণতির ওসবে মাথাব্যথা নেই, যত চিন্তা বৃষ্টির বহর দেখে গা জ্বালা করে। ঝমঝম করে রােজ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, একনাগাড়ে বৃষ্টি, রাস্তায় এক হাঁটু জল। বাস-ট্রামে জট, কি বিশ্রী অবস্থা। এদিকে গায়ে এক প্রস্থ ভিজে জামাকাপড়। কয়দিন থেকেই প্রণতি চেষ্টা করছে পূজোর বাজারটা। করে ফেলবে। কিন্তু তার কোন উপায় নেই, বেরবার মুখেই তেড়ে বৃষ্টি। মাঝে বিরতি হলেও আবার তেড়েমেড়ে। এইভাবে দেখতে দেখতে আকাশের সব আলাে নিভে যায়। চারিদিকে শুধু তা তা থৈ থৈ, তাতা থৈ থৈ।

আজ স্কুলে ঢুকেই প্রণতি সােজা বড়দিদির কাছে বলে আমি আজ তাড়াতাড়ি যাব, মার্কেটিং করব। আজ আকাশ দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে না। তাই আজই সব কেনাকাটা সেরে ফেলতে হবে। ব্যাগে কিছু জামাকাপড়ও নিয়েছি, বেলগাছিয়ার বড়মামার বাড়িতেও যাব।

টিফিন পিরিওডে প্রণতি ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সবে স্কুলের গেট ছাড়িয়ে মাত্র চারটে বাড়ি পার হয়েছে, ব্যস কোথা থেকে ঝমঝম করে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল বৃষ্টিতে। ব্যাগে ছাতা নেই, নিরুপায় প্রণতি। কি করবে বেচারী ? না পারে স্কুলে যেতে, না বাসস্টপে যেতে। এখন বিনা মেঘে বজ্রপাত। প্রণতি দিশাহারা হয়ে পড়ে। বাসস্টপের দিকে ছুটতে গিয়ে ভিজে জবজবে হয়ে যায়। কোন উপায়। দেখে একটা ছােট লােহা-লক্কড়ের ঘরে গিয়ে উঠে। হাতুড়ি পিটে লােহা সােজা করা হচ্ছে, যন্ত্রপাতিতে ভর্তি। প্রণতি কঁাচুমাচু মুখে লােকগুলাের দিকে তাকায়। অনুমতিতে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু উপায় কি! দরজার কোণে দাঁড়িয়ে প্রণতি বৃষ্টির জোর দেখে। একটু আগে পর্যন্ত আকাশ পরিষ্কার ছিল। কোন রকম বৃষ্টি হবার চান্স ছিল না, হঠাৎ কি যে হল তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। কে বলবে এখন বেলা দু’টো। দেখে মনে হয় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কালাে আর থমথমে আকাশ, বিদ্যুতের ঝিলিক। বাজের তীব্র আর্তনাদ। বৃষ্টির যে এমন ভয়ঙ্কর রূপ হতে পারে। ভাবতেই পারে না প্রণতি। বেলগাছিয়ায় যেতে হবে। এই বৃষ্টিতে যাবে কি করে ? তাছাড়া বৃষ্টি-বাদল প্রণতি দু’চোখে দেখতে পারে না। ঝিরঝিরে বৃষ্টি দেখলেই ও বাড়ির থেকে বের হয় না। আর এই বৃষ্টিতে কোন মানুষই ঘরের বাইরে পা রাখে । প্রণতি ইচ্ছে করেই লােহা নিয়ে কিছু কথা বলে। টানা একটা ঘন্টা কেটে যায়। বৃষ্টি কমার কোন সম্ভাবনাই দেখা যায় না।

শুধু কি বৃষ্টি, সঙ্গে শিলাও। শিলাবৃষ্টি। হঠাৎ প্রণতির মনে হয় এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না। তার চেয়ে ভিজে ভিজে বাসস্টপে গেলেই হয়, যা পাওয়া যাবে তাতেই উঠে পড়বে। মামাবাড়িতে না গেলে মা ভীষণ খেপে যাবে। তাই প্রণতি লােকগুলাের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে অনেক ধন্যবাদ, এতটা সময় আপনাদের অসুবিধা
করে বৃষ্টির হাত থেকে নিজেকে বাঁচালাম, এবার চলি।

একটা লােক হাতুড়িটা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলে— এই বৃষ্টিতে কোথায় যাবেন ? কিছুই কমেনি, বাসস্টপে যাবার আগেই আপনার ভালমতাে স্নান হয়ে যাবে। না, না এখন যাবেন না দিদি, এইখানেই দাঁড়িয়ে যান, কমলে যাবেন।

প্রণতি একটু হাসে, বলে— একপ্রস্থ আমার ভেজা হয়ে গেছে, আর একটু ভিজবাে। চলি ভাই, অনেক ধন্যবাদ। লােকটা বার বার বারণ করা সত্ত্বেও প্রণতি রাস্তায় পা রাখে।

মাত্র কয়েকটা পা এগিয়েছে, ব্যস তেড়ে বৃষ্টি, কোন উপায় না দেখে প্রণতি এদিক ওদিক তাকায়। বাসস্টপের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধক্ করে উঠে। কোন জনমানবের চিহ্ন নেই, সুনসান রাস্তা। প্রণতি বৃষ্টিকে দুইহাতে থামাবার ভঙ্গিতে ওপারে ছুটে যায়। চটি, শাড়ি সবই জলে ভিজে জব জবে। ওই বাসস্টপে গিয়ে প্রণতি কোন কুল পায় না।

READ ALSO  ভৌতিক - অভিজিৎ তরফদার

মাথার উপর বৃষ্টি নিয়ে কার দাড়াতে ভাল লাগে? একটা মাত্র গাছ, তার শরীর বেয়ে যেন ঝর্ণা বইছে। কোন উপায় না দেখে প্রণতি পাশে গেট খোলা বাড়িটায় ঢুকে পড়ে । গেটটা খোলা কিন্তু কোন মানুষের সাড়া শব্দ নেই। দরজা-জালনা সব বন্ধ। সব দরজায় তালা ঝুলছে। প্রণতি মনে মনে ভাবে এই বাড়ির সব মানুষগুলো বেড়াতে বেরিয়েছে ঠিক ওরই মতো। পূজোর কেনাকাটা সারতে। পথে হয়তো ওরই মতো অন্য কারুর বাড়িতে এমনি করে বসে আছে। এখন যেমন বসে আছে প্রণতি। এত বড় বারান্দায় এতক্ষণ ও দাড়িয়েছিল। তারপর নিজের মনেই ভাবল, এই বৃষ্টিতে রাস্তায় কেউ নেই, তার থেকে বারান্দায় বসে থাকি। নিশ্চিন্তে বসেই ছিল। কি করবে, সমস্ত ভাবনা চিন্তাকে বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে প্রণতি প্রকৃতিকেই দেখছিল। এই প্রকৃতির উপর মানুষের হাত নেই। ওর যা মন চায় তাই করে। কাউকে পরোয়া করে না। গালে হাত দিয়ে আবোল তাবোল ভাবছিল, হঠাৎ একটা কুকুর ওর গা ঘেঁষে দুইপাল্লার আটকানো দরজাটাকে ঠেলে ঢুকে গেল। প্রণতি চমকে ওঠে। ওরে বাবা করে উঠে। তারপর নিজের মনেই বলে বেচারা কুকুরটাও তো ওরই মতো বৃষ্টিতে আশ্রয় খুজছে। তাই এই বাড়িতে এসেছে । এখন ওর সঙ্গী এই ঘেয়ো কুকুরটা।

গল্পের দ্বিতীয় ভাগ

প্রণতি আর বসতে পারে না, জলের ঝাপটা ক্রমশ ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ও উঠে দাঁড়ায়। ঘড়িটার দিকে চোখ রাখে, বেলা সাড়ে চারটে । মনে হয় যেন ঘন রাত। প্রণতি আবার হোঁচট খায়। একটা কুচকুচে কালো বেড়াল ওর পায়ের উপর দিয়ে লাফিয়ে বাড়িটার ভিতর ঢুকে যায়। প্রণতি নিজের মনে অবাক হয়ে বলে-__ এতো বেশ মজার বাড়ি। বিড়ালটাও বাড়িটার ভিতর ঢুকে যায়, কালো বেড়াল দেখলেই গাটা কেমন শিরশির করে, মনটা খারাপ হয়ে যায়। ভাবে যদি একটু বসার জায়গা পেত, উঃ কি মজাই না হতো! এই বৃষ্টিতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে গোয়েন্দা, ভূতের গল্পের বই পড়তে দারুণ লাগে । তার সাথে তেলেভাজা আর মুড়ি। এইসবের বদলে অনোর বাড়িতে হা করে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ বাড়ির ভিতর থেকে ঝনঝন আওয়াজ এল। মনে হল কেউ দরজা খুলছে। প্রণতি বড় বড় চোখে ভাল করে নজর করে, না কাউকেই দেখতে পায় না বরং মনে হয় বহুদিন ধরে এই মরচে পড়া তালাগুলো ঝুলছে। প্রণতি নিজের মনেই বলে ওঠে, তাহলে এই বাড়িতে কেউ থাকে না? তালাগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় বহু যুগ ধরে এতে হাত পড়েনি। একটি অজানা ভয় প্রণতির সমস্ত শরীরটাকে স্পর্শ করে যায়। গাটা ছমছম করে। এদিকে আকাশভাঙ্গা বৃষ্টি, চারিদিক ঘন অন্ধকার, কি করবে ও নিজেও বৃঝে উঠতে পারে না। হঠাৎ মনে হয় কেউ যেন জানলার খড়খড়িগুলো সরালো। প্রণতি চমকে তাকায় জানলার দিকে। একটা হাত ওকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে। ওয় প্রাণে স্বস্তি আসে। যাক মিথ্যে ভাটার হাত থেকে বাঁচল ও। পায়ে পায়ে অর্ধেক দরজা ঠেলে ঢোকে । দেখে লোহার দরজাটা খোলা। ওকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে ভদ্রমহিলা দরজাটা খুলে দিয়েছে, সত্যিই ভাল। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাটিয়েছে, এবার বসবার জন্য প্রণতির মনটা ছটফট করে। এক গাল হেসে বলে এতক্ষণ আপনি ঘুমিয়েছিলেন ? উঃ যা বৃষ্টি হল, টের পাননি বোধ হয়?

বউটার গলায় খনখনে হাসির সুর বাজে। বলে তাইতো! পূজোর বাজার করতে বেরিয়েছ তাই না? এত বৃষ্টিতে কেনাকাটা করবে কি করে? এখানে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা কর, তারপর যাবে।

প্রণতি একটু অবাক হয়েই বলে-_ বা! আপনি তো বেশ বলতে পারেন? সত্যিই বেরিয়েছিলাম। কি ছাই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তা আপনার বুঝি সব হয়ে গেছে?

বউটি ফের সেই অদ্ভুতভাবে হাসে আর বলে — আমার কেনাকাটার মধ্যে বাকি শুধু আলতা, সিঁদুর। এইদুটো পেলেই কেনাকাটা সারা। তোমার ব্যাগটা তো দেখছি ভর্তি, নিশ্চয়ই আলতা সিদুর আছে? প্রণতি পুরনো ঝরঝরে চেয়ারটায় বসে শান্তি পায় না। একটু নড়লেই কি ক্যাচক্যাচ শব্দ। মনে হয় বহুবছর কেউ এটায় বসেনি। প্রণতি শব্দ বাঁচিয়ে বসার চেষ্টা করে, পারে না। একটু বিরক্তির মুখে বলে-_ আপনি কি সতিই হাত গুনতে জানেন?

READ ALSO  ভৌতিক - অভিজিৎ তরফদার

হ্যা, আমার ব্যাগে আলতা-সিঁদুর আছে। আমার মা মামীমাকে দেবার জন্য দিয়েছেন। দেখুন না কি ছাই বৃষ্টি শুরু হয়েছেঃ এখন কেমন করে বেলগাছিয়ায় যাব? খুব রাগ হচ্ছে।

বউটি ঘোমটার আড়ালে সেই বিশ্রী হাসিটা হেসে বলে-_ বৃষ্টি না হলে তো তুমি এই বাড়িতে ঢুকতে না। জান আমার মন বৃষ্টি চাইলেই বৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টিতে লেমন টী দারুণ লাগে তাই না? খাবে নাকি?

প্রণতি লেমন টী’র কথা শুনে লোভ সামলাতে পারে না। তবে লাজুক গলায় বলে-_ শুধু শুধু আমার জন্য আপনাকে করতে হবে। এটা ভাল লাগছে না। ঘোমটার আড়ালে ঢাকা। জড়ানো গলায় বলে-শুধু কি তোমার জন্য করা হবে? আমার স্বামী, মেয়েও আসবে । ওরা এই লেমন টী খুব ভালবাসে । তাছাড়া আমার কাজের মেয়ে শৈল আছে, ও এখনই সব করে আনবে।

প্রণতি বিস্ময়ের সঙ্গে বলে ওঃ আপনার স্বামী আর মেয়ে পূজোর মার্কেটিং করতে গেছে? তা আপনি যাননি কেন?

বউটি গলাটা কান্নায় ভরিয়ে বলে_ কি করে যাব? সবাই গেলেতো বাড়িটা ফাকা থাকবে। আমি এই ঘর ছেড়ে কোথায়ও যাই না। এই ধর তোমার লেবু চা। বললাম না দেরী হবে না। লেবুচায়ের কাপ প্লেট হাতে ধরে প্রণতি চমকে উঠে, এক নিমেষে চা! এত ভাল কাজের মেয়ে, আবার এত চটপটে ! মেয়েটির দিকে তাকিয়ে প্রণতি বলে-_ নাম কি তোমার? ওড়না দিয়ে মুখটা ঢেকে রেখেছ কেন? তুমি তো খুব ভাল মেয়ে; চাণ্টাও খুব ভাল বানিয়েছ। তোমার নাম কি?
মেয়েটি কোন উত্তর দেয় না। ঘর ছেড়ে চলে যায়। বউটি সেই গা ছমছম করা হাসিটা দিয়ে বলে_ ও বোবা, কথা বলতে পারে না। দেখ আধঘন্টার মধ্যেই বৃষ্টি কমে যাবে। বউটি যেন সত্যিই গুনতে জানে। প্রণতি বারান্দায় এসে দেখে বৃষ্টির সেই তেজটা আর তেমন নেই। তবে অনবরত ঝরেই যাচ্ছে। বউটির দিকে তাকিয়ে প্রণতি বলে__ এতক্ষণ লোডশেডিং! বাববা, কখন কারেন্ট আসবে? রোজই বুঝি এতক্ষণ অন্ধকারে থাকতে হয়?
বউটি ফেটে যাওয়া শীফে ফুয়ের মত শব্দ করে হেসে বলে আমি অন্ধকারই ভালবাসি । আলো দিয়ে কি হবে? আমি তো সবই দেখতে পাচ্ছি। তুমি কপালে বড় টিপ পরেছ, সবুজ রংয়ের শাড়ি পরেছ। তোমার ব্যাগে কি কি আছে, তাও দেখতে পাচ্ছি। আলতা, সিঁদুর, একটা শাড়ি তাই না? মামীমাকে দিতে যাচ্ছ?

প্রণতির গলার স্বরটা কেপে উঠে, বলে_ সত্যিই আপনি গণৎকার। আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। এই আপনাকেই দেখতে পাচ্ছি না। অথচ কত কথা বলে যাচ্ছি। যাক, এবার উঠবো । বৃষ্টিটাও থেমে আসছে। অন্য একদিন এসে গল্প করে যাব। স্কুলের সামনেই বাড়ি। একদিন সত্যিই আসবো । প্রণতি দরজার বাইরে বেরিয়ে আসতে গিয়ে হোঁচট খায়। বউটি হাতটা বাড়িয়ে বলে-_ আলতা, সিঁদুরটা দিলে না? ওটাই আমার পৃজোয় কেনা হয় নি।

প্রণতি ব্যাগ থেকে আলতা সিঁদুর বার করে বউটার হাতে দিতে গিয়েও পারে না। বউটি ছৌ মেরে ওর হাত থেকে তুলে নেয়।

প্রণতি ধন্যবাদ দিয়ে লোহার গেটটার সামনে দিয়ে বের হতেই দেখতে পায় সেই ঘেয়ো কুকুর আর কালো বেড়ালটা ঢুকছে। বউটার গলার সেই তীক্ষ্স স্বরটা প্রণতির কানে এসে বাজে। এসে গেছ তোমরা । আমার আলতা সিঁদুর পেয়ে গেছি। তারপরই লোহার দরজাটা ঝমঝম করে বন্ধ হয়ে যায়। গোটা বাড়িটার দিকে তাকালে মনে হয় জনমানবশূন্য এক পরিত্যক্ত বাড়ি। ঘুটঘুটে খালি অন্ধকার।

গল্পের তৃতীয় ভাগ

প্রণতি বাসস্টপে দাড়িয়ে নিজের মনেই বলে উঃ যা গেল এতক্ষণ! ভাগ্যিস এই বাড়িটায় ঢুকতে পেরেছিলাম, নইলে যে কি হতো কে জানে ! ভাবতে ভাবতে বেলগাছিয়ার ট্রামে চেপে বসে। বেলগাছিয়ায় নেমে সোজা মামাবাড়িতে ওঠে। ওর দিকে তাকিয়ে মামীমা-মামা সব হতবাক হয়ে যান। বিস্ময়ে বলেন-__ এই বৃষ্টি বাদলার দিনে এলি কি করে? সবতো বন্ধ। বাস, ট্রাম চলছে? কেন এলি ? তোর যত পাগলামো। যদি কোন বিপদ হতো, কি বাজ পড়ছে!

READ ALSO  ভৌতিক - অভিজিৎ তরফদার

প্রণতি অবাক হয়ে বলে_ বাস, ট্রাম সব বন্ধ! সেকি মামা? আমি তো ট্রামে চেপেই এলাম। তবে এই বৃষ্টিতে একটা বাড়িতে ঢুকে রক্ষা পেয়েছি। তা না হলে যে কি হতো তা ভগবানই জানেন। ব্যাগের ভেতর থেকে শাড়িটা বার করতে গিয়ে প্রণতি বিস্ময়ে চমকে উঠে বলে_ এই আলতা সিঁদুর এল কি করে? আমি যে নিজের হাতে দিয়ে এলাম! তাহলে কি মা বেশি দিয়ে ফেলেছে? প্রণতি মামীমার হাতে শাড়ি, করে। একটাই কথা ব্যাগে আলতা, সিদুর এল কি করে! একি ও স্বপ্ন দেখছে ? বাড়িতে গিয়ে যতক্ষণ মাকে না জিজ্ঞেস করবে ততক্ষণ ওর শাস্তি নেই। মনটা কেমন বিষাদে ভরে ওঠে। মামাবাড়ি থেকে অনেক কষ্টে বিদায় নিয়ে বাড়ি যায়। বাধ্য হয়ে মামাই ওকে একটা চেনা ট্যাক্সি ধরিয়ে দেয়।

প্রণতি বাড়িতে ঢুকেই মাকে সোজা প্রশ্ন করে_ মা তুমি আমার ব্যাগে কয়টি আলতা সিদুর দিয়েছিলে? ঠিক করে বল?

মা একটু অবাক হয়ে বলেন__ কেন কি হয়েছে? একটা আলতা, একটা সিঁদুরের কৌটা দিয়েছি। ওই শাড়িটার সঙ্গে কিনে এনেছিলাম। কেনরে? তোর মুখচোখ অমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে তোর আমাকে সব খুলে বল প্রণতি। |

প্রণতি কোন কথা বলে না, ওর সমস্ত শরীর কাপতে থাকে। ইচ্ছে করে দৌড়ে ওই বাড়িটায় গিয়ে দেখে আসে । বউটি কেন এমন মজা করল ওর সাথে? বাড়িতে কাউকেই ও কোন কথা বলে না। বিছানায় একা ভয়ে ভাবতে থাকে আকাশপাতাল। ওর শুধু একটাই ধ্যানজ্ঞান কখন ভোর হবে, স্কুলে যাবে । ওদের স্কুলের যে দারোয়ান সেই সব বলতে পারবে।

‘সিঁদুর এল কি করে? আমি যে নিজের হাতে ও ওখানেই থাকে। বউটা নিশ্চয় পাগল।

চেয়ে নিয়ে আবার হয়তাে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু…….। প্রণতি নিজের মনেইবলে দেবে কি করে ? আমি তাে দিয়েই বেরিয়ে এসেছি। গােটা রাতটা জেগে কাটে প্রণতির।

সারাদিন অবসন্ন দেহে প্রণতি স্কুলে এসে ঢােকে। ওর মুখচোখে দুশ্চিন্তার ছাপ। টিফিন আওয়ারে সােজা দারােয়ানজীকে কাছে ডেকে বলে— আচ্ছা বিলাস বলতে পার, আমাদের বাসস্টপের সামনে যে লােহার গেট দেওয়া
বাড়িটা আছে সেখানে কারা থাকে ? তুমি তাে এই পাড়ার লােক— সবই জানবে। কাল ওই বৃষ্টির সময় ওই বাড়িতেই বসেছিলাম। লেমন টী খেলাম, খুব পুরনাে বাড়ি, বাইরের
থেকে দেখলে মনে হয় কোন লােকজন নেই, কিন্তু লােক আছে।

বিলাশ দু’পা পিছিয়ে এক পা এগিয়ে এসে হায় হায় করে উঠে বলে- সত্যিই আপনি ওই বাড়িটায় বসেছিলেন ? কি বলছেন দিদি ! ওই বাড়িতে তাে কেউ থাকে না। আপনি সব ঝুট বলছেন! অন্য কোন বাড়িতে নিশ্চয় বসেছিলেন। আর ওই বাড়িতে মানুষ থাকবে কি করে ? সবাই তাে মারা গেছে। সে খুব কষ্টের ঘটনা। পূজোর বাজার করতে গিয়েই গাড়ি এ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছে। কেউ থাকে । সব ঘরে তালা ঝুলছে। আপনি বিশ্বাস করেন, চলুন আমার সঙ্গে, এখনই দেখিয়ে দিচ্ছি।

এখানকার লােকেরাতাে বলে– ওটা ভূতের বাড়ি, আমার হাসি পায়, ওসব আমি বিশ্বাস করি না। তবে জেনেছি ঝড়বৃষ্টির দিনে দরজাটা খুলে যায়। এসবই শােনা কথা দিদিমণি, আমি নিজের চোখে দেখিনি। আপনি যখন বলছেন, তখন চলুন পরীক্ষা করে আসি। এইরকম আরও কয়েকটা ঘটনার কথা আমি শুনেছি।

প্রণতি আঁৎকে উঠে বলে—উঃ কি ভয়ঙ্কর বউটা! ঘেয়াে কুকুর, কালাে বেড়ালটা, কাজের বােবা মেয়েটা। বিলাস তাহলে কি সত্যিই কাল বিকেলটা ভূতের সঙ্গে আড্ডা দিলাম? এখন আমার নিজেকে কেমন ভূত ভূত মনে হচ্ছে, ভয় করছে।

Bhayonkar Sob Bhooter Galpo – Alta Sindur, Alta Sindur – Bhayonkar Sob Bhooter Galpo, Bangla Bhuter Golpo, Horror Bengali Story

SGPedia.Com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
WP Radio
WP Radio
OFFLINE LIVE